শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
নিবন্ধিত দলের চেয়ে অনিবন্ধিত দলের নেতাদের দাপটে দিশেহারা সরকার।
আর এ লায়ন সরকার,নরসিংদী।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রভাব ও অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করেই গণতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে। নির্বাচন কমিশনের তালিকায় ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে, যাদের মধ্যে বড় দল হিসেবে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো শক্তিশালী দলগুলো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধিত দলের বাইরেও কিছু অনিবন্ধিত রাজনৈতিক সংগঠন ও জোট এমন প্রভাব বিস্তার করছে, যা সরকার এবং প্রশাসনের জন্য নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
নিবন্ধিত দলগুলোর বর্তমান অবস্থা
নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে অনেকে এক যুগ বা তার বেশি সময় ধরে সরকারে বা বিরোধী দলে থেকেছে। নির্বাচন, সংসদীয় কার্যক্রম, গণতান্ত্রিক আলোচনা—সবকিছুতেই তাদের নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এদের আছে নির্বাচনী প্রতীক, পরিচিতি, মাঠপর্যায়ের সংগঠন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু সত্ত্বেও, মাঠ পর্যায়ে তারা ক্রমশ জনগণের দৃষ্টি হারাচ্ছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেক নিবন্ধিত দল শুধু নামেই টিকে আছে, কার্যত তেমন কোনো রাজনৈতিক তৎপরতা বা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না।
অনিবন্ধিত দলের উত্থান ও দাপট
অনিবন্ধিত দলগুলো—যেমন বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী, ছাত্র ও যুব জোট, নাগরিক আন্দোলন, পেশাজীবী সংগঠন এবং আঞ্চলিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী—দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, জনসভা, ধর্মঘট ও আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রকাশ করছে। এদের মধ্যে কোনো কোনো গোষ্ঠী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন না নিয়ে সামাজিক আন্দোলন, ধর্মীয় শাসন, বা বিশেষ দাবিকে কেন্দ্র করে বিশাল জনসমর্থন গড়ে তুলেছে।
যেমন:
হেফাজতে ইসলাম বা চরমোনাইয়ের ইসলামী আন্দোলন, যারা ধর্মীয় ইস্যুতে লাখো মানুষের জমায়েত করতে পারে;
নাগরিক সমাজের কিছু অংশ, যারা সরকারের মানবাধিকার বা সুশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে সরব;
ছাত্র ও যুব সংগঠন, যারা অনলাইন-অফলাইনে বিশাল আলোড়ন তুলছে।
সরকারের দিশেহারা অবস্থা
সরকারের জন্য আসল সমস্যা হলো—নিবন্ধিত দলের ক্ষেত্রে আইন ও নিয়ম আছে, কিন্তু অনিবন্ধিত দল বা গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে প্রশাসনের হাত প্রায় বাধা। নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনা ও সমঝোতার সুযোগ থাকে, কিন্তু অনিবন্ধিত দলগুলোর কাছে সরকারের বার্তা পৌঁছায় না, বরং প্রায়ই হুমকি-ধামকি বা শক্তি প্রদর্শনের পথে গিয়ে সরকারকে চাপে ফেলে।
এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনিবন্ধিত দলগুলোর নেতা-কর্মীরা যে গতিতে প্রচার চালাতে পারে, তাতে সরকার একরকম অদৃশ্য লড়াইয়ের ময়দানে পড়ে যাচ্ছে। ফলে একদিকে সরকারকে নিয়মিত প্রশাসনিক শাসন চালাতে হচ্ছে, অন্যদিকে অনিবন্ধিত দলগুলোর কারণে হঠাৎ আন্দোলন, জনমত চাপ, বা রাস্তায় বিক্ষোভ দমন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি এই পরিস্থিতি সামলাতে চায়, তাহলে তাকে তিনটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে:
১. অনিবন্ধিত দলগুলোকে কোনোভাবে রাজনৈতিক কাঠামোয় আনার উদ্যোগ নিতে হবে;
২. নির্বাচনী রাজনীতির বাইরে থাকা শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনার নতুন ফোরাম তৈরি করতে হবে;
৩. সমাজে যে ক্ষোভ বা বিচ্ছিন্নতা থেকে এই আন্দোলনগুলো জন্ম নিচ্ছে, তা দূর করতে হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ এক অদ্ভুত সময়। ভোটের রাজনীতিতে নিবন্ধিত দলেরা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, মাঠের বাস্তবতায় অনিবন্ধিত দলের নেতাদের দাপটই বেশি চোখে পড়ছে। এ দাপট সামাল দিতে সরকারকে এখন পুরনো নিয়মের বাইরে এসে নতুন রাজনৈতিক কৌশল ভাবতে হবে, না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।