শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন
ঠাকুরগাঁওয়ে মাঠের মাঝখানে ২২ বিঘা জমি জুড়ে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরে আলিশান বাড়ি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ২২ বিঘা জমিতে আলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ ওবায়দুল হক। এই ট্রাফিক পুলিশের বাড়ি নোয়াখালী শহরে। রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপির) ড্রাইভিং অ্যান্ড ট্রেনিং স্কুলে কর্মরত ছিলেন ওবায়দুল হক। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চলতি বছরের প্রথম দিকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তাঁকে ঢাকা রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। পরে তিনি অফিসকে না জানিয়ে পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী হলেও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ওবায়দুল হকের বাড়ি রয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি এ রকমই একটি বাড়ি গড়েছেন বালিয়াডাঙ্গীতে।কয়েক মাস ধরে বালিয়াডাঙ্গীর ওই বাড়িতে ওবায়দুল হকের আসা-যাওয়া নেই। তবে বাড়িটি তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কঠোর নিরাপত্তা বজায় রেখে চলেছেন। এ কারণে এ বাড়ি নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই এলাকাবাসীর মনে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের নিরাশী পুকুরের পাকা রাস্তার উত্তর পাশে গড়ে তোলা হয়েছে ওই আলিশান বাড়িটি। মূল সড়ক থেকে বাড়িটিতে প্রবেশের জন্য রাস্তা পাকা করে দুই পাশে বিশ্রামের জন্য বসানো হয়েছে লোহার চেয়ার। মূল গেট সব সময় থাকে তালাবদ্ধ। সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে চারতলা একটি বাড়ি, রয়েছে সারি,সারি আম-কাঁঠাল ও লিচুবাগান। এক পাশে রয়েছে গরু-ছাগল-ঘোড়া আর ভেড়ার খামার। পাশেই দোতলা আরও দুটি বাড়ি। নিচে রাখা হয়েছে গাড়ি আর চারপাশে ধান ও সবজিখেতের সবুজের সমাহার।প্রত্যন্ত গ্রামে এমন বাড়ি ও খামারটির মালিক ওবায়দুল হক ৬মাস আগে বিদেশে গেছেন বলে জানান কর্মচারীরা।ওই বাড়ির কেয়ারটেকার আব্দুল লতিফ জানান, ১০ বছর আগে ২২ বিঘা জমি কিনেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ওবায়দুল হক। ধীরে ধীরে সেখানে গড়ে তোলেন চারতলা বাড়িসহ গবাদিপশুর খামার। খামারে ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়। খামারে এখন ৪৫টি দেশি-বিদেশি গরু রয়েছে। উত্তর পাশের খামারে রয়েছে ৩টি ঘোড়া, ৪০টির মতো ভেড়া, ৫০টি ছাগল এবং দেশি-বিদেশি কয়েক’শ কবুতরও রয়েছে।ওই বাড়ির কেয়ারটেকার লতিফ আরও জানান, তাঁর সঙ্গে আরও ৪-৫ জন ফসল ও খামার দেখাশোনা করেন। ঢাকায় লিটন নামে এক ব্যক্তি তাঁদের তদারকি করেন এবং ওই লিটনের মাধ্যমেই তাঁদের বিভিন্ন কাজের নির্দেশনা এবং বেতন দেন বাড়ির মালিক ওবায়দুল হক।
জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের বারঢালি বাজার, কালমেঘ বাজার এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া গ্রামে আরও ২০ বিঘা জমি কিনেছেন ওবায়দুল হক।
বাড়িটি ঘুরে দেখা যায় একটি ভবনের বারান্দায় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে একটি সরকারি গাড়ি। যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ঠ-১৫-৭৫০৩। বাড়ির চত্বরে বসানো হয়েছে শিশুদের নানা ধরনের বিনোদনের উপকরণ। ওই মৌজায় এক বিঘা জমির মূল্য কমপক্ষে ২৩-২৫ লাখ টাকা বলে জানান স্থানীয়রা। সে হিসাবে বাড়ি, খামার ও জমির হিসাব করলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় কমপক্ষে ১২ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে ওবায়দুল হকের। একজন ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর কিভাবে এত সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন । তা নিয়ে স্হানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্ন রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তার এই সম্পদ অর্জনের উৎস খুজে বের করবে স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন। এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।