শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ অপরাহ্ন
উদ্বোধনের অপেক্ষায় যমুনা নদীর ওপর
নির্মাণাধীন রেল সেতু।
গৌরাঙ্গ বিশ্বাস বিশেষ প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার অদূরে দেশের দীর্ঘতম নির্মাণাধীন রেলওয়ে সেতুর ৯৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর মাত্র বাকি ২ শতাংশ কাজ শেষ হলেই ডিসেম্বরে উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার পর এই রেল সেতু দিয়ে বিরতিহীনভাবে কমপক্ষে ৮৮টি
ট্রেন দ্রুতগতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। ফলে সেতু পারাপারে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় সাশ্রয় হবে।
এছাড়া টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সেতুর পূর্ব প্রান্তে নতুন রেল
স্টেশনের কাজ প্রায় সম্পন্ন এবং সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তের রেল স্টেশনের কাজও প্রায়
শেষের দিকে। এখন রেল সেতু নির্মাণ শ্রমিকরা রঙ-তুলি ও ঘষামাঝার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান- নির্মাণাধীন রেল সেতুর কাজ ইতিমধ্যে ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে।
এছাড়া নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ছে না। আশা করছি, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে উদ্ধোধন করা যাবে।
সেই লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত গতিতে রাতদিন কাজ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে রেল সেতুর ওপর দিয়ে একাধিকবার ট্রায়াল ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন রেলওয়ে সেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চলাচলের উপযুক্ত করে নির্মাণ করা
হয়েছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্ছ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
তবে শুরুতে (উদ্বোধনের ১ বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চ‚ড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এর মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয়ও বৃদ্ধি করা হলে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩
হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এরমধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭.৬০ শতাংশ এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। যা প্রকল্পের ৭২.৪০ শতাংশ।
এই রেল সেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ও ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার
রেলসেতুর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে
অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ সাইডিংসহ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে
রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল
যোগাযোগ স্থাপিত। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে
দেওয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০
কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে । এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর
ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।