বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
কাজ ভাগিয়ে নিতে কোটি টাকা দুর্নীতি: নরসিংদী জেলা কারাগার প্রকল্পে বিশ্বাস বিল্ডার্সের দাপট।
আর এ লায়ন সরকার, নরসিংদী
দুদক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে অন্তত ২৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য। সুশীল সমাজের প্রশ্ন: একের পর এক দুর্নীতি, রাজনৈতিক সহিংসতা, জালিয়াতি — এসব প্রমাণ সত্ত্বেও কেন কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের ছত্রছায়ায় একের পর এক সরকারি প্রকল্প দখলে নিচ্ছে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলালের প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেড। সাম্প্রতিক অভিযোগ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের সহযোগিতায় নরসিংদী জেলা কারাগার নির্মাণের কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে বিশ্বাস বিল্ডার্সের মালিক নজরুল দুলালের বিপুল অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে। কক্সবাজার, কিশোরগঞ্জ, রূপগঞ্জ এবং রাজধানীতে থাকা সম্পদের বৈধ উৎসের সপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অন্তত ২৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে, যা থেকে স্পষ্ট — তার ব্যবসা কার্যত জালিয়াতি ও দুর্নীতির উপর দাঁড়ানো।
ছাত্র নিপীড়ন ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অর্থায়ন
শুধু সরকারি প্রকল্পেই নয়, নজরুল দুলালের বিরুদ্ধে রয়েছে বিরোধী মত দমন ও ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থায়নের অভিযোগও। বিভিন্ন জেলা থেকে ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে তিনি ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছেন — এমন অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। রাজনৈতিক মহলে তাকে ‘ছাত্র হত্যার মদদদাতা’ হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
জমি জালিয়াতির অভিযোগও
রাজধানীর নিউমার্কেট সংলগ্ন এক কোটি টাকার বেশি মূল্যের একটি জমি প্রকল্প নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ৮২ জন প্রকৃত মালিকের মধ্যে ৩৪ জনকে সম্পত্তির হিস্যা না দিয়ে, স্বাক্ষর জাল ও ভুয়া দলিলের মাধ্যমে পুরো প্রকল্প আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ।
দুদকের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম দুলালের কাছে ইতোমধ্যে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেওয়ার অনুমোদন পেয়েছে কমিশন। পাশাপাশি, জমি জালিয়াতির মামলাতেও পৃথকভাবে অনুসন্ধান চলছে।
একাধিকবার ফোন ও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নজরুল ইসলাম দুলাল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
সুশীল সমাজের নেতারা বলছেন, একের পর এক প্রকল্প লুট, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, জালিয়াতি ও অবৈধ সম্পদ সঞ্চয়ের অভিযোগের পরও যদি রাষ্ট্র দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে দুর্নীতির শিকড় আরও গভীরে পৌঁছে যাবে।