নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের তৃণমূলকমী রেখে আত্মগোপনে প্রভাবশালী নেতারা।

আর এ লায়ন সরকার নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি।

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর থেকে বাড়ি এবং এলাকা ছাড়তে শুরু করেন ভেঙে দেয়া দ্বাদশ সংসদের নরসিংদীর ৫ এমপি ও দলীয় নেতাকর্মীরা।

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ খবর নিয়ে এ সব তথ্য জানা গেছে। এছাড়া গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে তাদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,পলাশ -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডাক্তার আনোরুল আশরাফ খান দিলীপের কোনো খোঁজ মিলছে না। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।তবে তার ঘনিষ্ট একজন জানান, তিনি ঘটনার দিন পলাশ ছিলেন। পর দিন সুযোগ বুঝে পলাশ ছেড়েছেন। তবে বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তার কোন খবর কেউ দিতে পারছে না। সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের আগ মুহূর্তে সার র্কেলেঙ্কারির দায়ে জেল হাজতে রয়েছেন।

নরসিংদী-১ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ নজরুলইসলাম হিরোর নিকটতম কয়েকজন অনুসারীর কাছ থেকে জানা যায়, দেশের চলমান অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর কয়েকদিন দলীয় কার্যালয়ে এসেছিলেন এর পর থেকে নিজ এলাকায় আসেননি।

এদিকে খোজঁ মিলছে না রায়পুরা ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজউদ্দিন আহমেদ রাজুর। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি ৫ আগষ্টের আগে দলীয় একটি সভায় অংশ নেন। এরপর শেখ হাসিনার পতনের খবর পেয়ে ওই সময় তিনি কৌশলে রায়পুরা ছাড়েন।
রায়পুরা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার সাথে তার ছেলে রাজিব আহমেদ পার্থ ও পরিবারের লোকজন ছিল বলে জানা যায়। মিজান চৌধুরী ঈগল পথিক নিয়ে পরাজিত হওয়ার পর এলাকাতে দেখা মিলেনি। রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান ফাতেমা-কানিজ লাকি এনভিআর কর্মকর্তার ছাগল কাণ্ডের পর বিভিন্ন মিডিয়াতে দুর্নীতির খবর ভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কিছুটা আড়াল করে নেন,সরকার পতনের পর পুরোপুরি আত্মগোপনে চলে যান।

নরসিংদী - ৪ (মনোহরদী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী কিছুদিন এলাকা ছেড়ে ভিন্ন গোপন কোন স্থানে অবস্থান করছিলেন বলে জানা যায়। তার নিকটজনেরা জানান সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাবার গ্রেফতার এর আগে মনজুরুল মজিদ সাদী এলাকায় ছিলেন বলে জানান নিকটতম নেতাকর্মীরা। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচনে পরাজিত হয়ে কিছুটা নীরবে ছিলেন বিরু, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এলাকাতে দেখা যায়নি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানকে।

নরসিংদী-৩ শিবপুর সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এলাকায় ছিলেন। সরকার পতনের পর তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে।ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হলে বিএনপি'র প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে মামলা থেকে নাম অব্যাহতি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বলে জানা যায়। সিরাজ মোল্লার পিএস আবুল কালাম আজাদ, মোল্লার পক্ষ থেকে মামলার বাদীদেরকে ম্যানেজ করতে ব্যস্ত রয়েছেন।
সিরাজ মোল্লার স্ত্রী শিবপুর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ফেরদৌসী ইসলাম সিরাজ মোল্লার ভাই শামসুদ্দিন মোল্লা নরসিংদী জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি তারাও এলাকা ছেড়ে লাফাত্তা।

গত ২০২৪ এর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন এর থেকে এলাকায় সময় দেন না বলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক সংসদ মোহন নিজ এলাকাতে আসেন না বলে জানা যায়।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন রশিদ খানের মৃত্যুর পর ওই পরিবার থেকে শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকে ফজলের রাব্বিকে শিবপুর আসেন থেকে মনোনয়ন দেন,সিরাজুল মোল্লা সাথে পরাজিত হওয়ার পর নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন নিজ এলাকায়,হাসিনা সরকারের পতনের পর শিবপুর এলাকায় তাকে দেখা যাচ্ছে না বলেও জানান নেতাকর্মীরা। শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ভূইয়া রাখিল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহসিন নাজির হোসেন দলীয় নেতাকর্মীদেরকে ফেলে আত্মগোপনে রয়েছেন।

এদিকে নরসিংদীর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ১-নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র বহুল আলোচিত রাজনৈতিক নেতা ৫ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত নরসিংদী অবস্থান করছিলেন কিছুটা আত্মগোপনের মত। একাদিক হত্যা মামলা হওয়ার পরে ঢাকার বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা যায়।

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন,সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহামমদ আলী, নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু,যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ,ছাত্রলীগের সভাপতি আসানুল ইসলাম রিমন, সাধারণ সম্পাদক শাহাজালাল আহমেদ শাওন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি তানজিরুল হক রনি,সাধারণ সম্পাদক ইছাক খলিল বাবু,মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাধবদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ঘোড়াশাল পৌরসভার সাবেক মেয়র পলাশ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মুজাহিদ হোসেন তুষারসহ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগ, যুব মহিলা লীগ, শহর ছাত্রলীগ উপজেলা চেয়ারম্যানসহ উল্লেখযোগ্য কোন নেতাই নেই শহরে। এমনকি তারা কেউ নিজ নিজ বাসাবাড়িওে নেই।

দলীয় অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। জনতার রোষানলে পড়ার ভয়ে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে এভাবে দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব নেতাদের গা ঢাকা দেওয়াকে কর্মী সমর্থকরা বলছেন বেঈমানী। এতোদিন যে সব নেতার নির্দেশে কর্মী সমর্থকরা অকাম কুকাম করেছেন এখন তাদেরকে বিপদের মুখে ফেলে সে সব নেতাদের পালিয়ে যাওয়াকে কাপুরুষকতা বলছেন মাঠের কর্মী সমর্থকরা