বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৩০ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞাপন :
সংবাদিক নিয়োগ! আপনি যদি সাংবাদিকতা এবং প্রতিবেদনে অভিজ্ঞ হন এবং ব্রেকিং নিউজ থেকে প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য আগ্রহী হন, তবে সম্মানিত সংবাদ সংস্থা তে আপনার জন্য সুযোগ আছে। সংবাদিক মান্যতা এবং প্রতিবেদন ক্ষমতা সাথে জয়েন করুন।
সংবাদ শিরোনাম
রওজা শরীফকে দুধ গোসলের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হলো হযরত গণি শাহ (রঃ ) এর তিন দিনব্যাপী ভক্ত সম্মেলন। দিঘলিয়া প্রেসক্লাবের ক্রীয়া সম্পাদক রানা মোল্লার শিশু কন্যার সুস্থতা কামনা  বালু খেকোদের হামলার মুখে ম্যাজিট্রেট ও সাংবাদিক  দিঘলিয়ায় তারেক রহমানের নির্দেশে দুঃস্হ এতিমদের মাঝে কম্বল বিতরণ।  বিএনপি নেতাদের সাথে আতাঁত করে ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পলাতক চেয়ারম্যান যুবলীগ ক্যাডার আনিছুর  বেনাপোলে বিজিবি-বিএসএফ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত আব্দুল আলীমের মরদেহ দীর্ঘ আড়াই বছর পর ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন। নরসিংদী মনোহরদী চালাকচর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ। ভারত যাওয়ার পথে ইডেন ছাত্রলীগ নেত্রীসহ গ্রেফতার ২ ভারত যাওয়ার পথে ইডেন ছাত্রলীগ নেত্রীসহ গ্রেফতার ২

নরসিংদীতে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ব্যর্থতা না প্রতিবন্ধকতা

নরসিংদীতে আইন শৃঙ্খলার অবনতি
ব্যর্থতা না প্রতিবন্ধকতা

মাইনউদ্দিন সরকার, নরসিংদী :
নরসিংদীতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় আতংকিত আছেন জেলাবাসী। পাশাপাশি খুনের অভয়ারণ্য হিসেবে আলোচিত হয়ে উঠেছে নরসিংদী জেলা। শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীসহ ৬ টি হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি থানা ও আদালত প্রাঙ্গণে আসামী ছিনিয়ে নিতে পুলিশের উপর হামলায় শংকিত জেলার সাধারণ মানুষ । দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে গৃহযুদ্ধের শংকায় সুধী সমাজ।

৩০ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে মাধবদীতে ডাকাতি মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে হামলা করলেও অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে হামলাকারীরা। খবর পেয়ে ডিবি পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতে সাংবাদিকদের কাছে হামলার কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিম উল্লাহ।
অপরদিকে একই দিন নরসিংদী জেলা জজ আদালতের গেইটে পুলিশের নিকট হতে হত্যা মামলার দুই আসামী ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে আসামীর স্বজনেরা। এসময় আসামীকে হেফাজতে রাখতে ধস্তাধস্তিতে আহত হয়েছেন আসামী নিয়ে আসা মনোহরদী থানার উপ পরিদর্শক (এস.আই) টুটুল হোসাইন।
সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গনের ৩ নং গেইটে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন উপ পরিদর্শক (এস.আই) টুটুল হোসাইন। নরসিংদী আদালত পুলিশের পরিদর্শক খন্দকার জাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২১ ডিসেম্বর শনিবার বেলাব উপজেলার বটেশ্বরে তোফাজ্জল হোসেন কুপিয়ে হত্যা করেছে তার মা সাফিয়া বেগমকে।
ঐ দিন রাতেই নরসিংদীর সদরের পাঁচদোনায় হুমায়ূন কবির (৩৫) নামে স্থানীয় বিএনপির এক কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা নাগরার হাট মাছের আড়ৎ মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হুমায়ুন মেহেড়পাড়া ইউনিয়নের নাগরারহাট এলাকার মৃত একরামুল হকের ছেলে।

নিহতের ভাতিজা তন্ময় জানান, রাতে পাঁচদোনা তার বাড়ী সংলগ্ন মসজিদের মাঠে হুমায়ুনসহ কয়েকজন ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন। ১১টার দিকে হুমায়ুনের পরিচিত ২ জন যুবক হুমায়ুনের সাথে গোপন কথা বলার জন্য খেলার মাঠের অদূরে মসজিদের দিকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপরই গুলির শব্দ শুনতে পান মাঠে থাকা তন্ময়সহ অন্যরা। এসময় তন্ময় এগিয়ে গেলে তার উপর গুলি ছুঁড়লে গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গুলিবিদ্ধ হুমায়ুনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২০ ডিসেম্বর রাতে মাধবদীতে চাঁদা না দেয়ায় নুর মোহাম্মদ (৪৮) নামে এক পাওয়ারলুম কারখানা মালিককে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর গুমের উদ্দেশে মরদেহ ফেলতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হয় অভিযুক্তরা।
নূর মোহাম্মদ নিজ পাওয়ারলুম ও টেক্সটাইল কারখানা পরিচালনা করে আসছিলেন। সম্প্রতি এলাকার বেশ কয়েকজন নুর মোহাম্মদের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তবে তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। শুক্রবার রাতে নূর মোহাম্মদকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পাশের একটি বন্ধ কারখানায় নূর মোহাম্মদকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
গত ১৮ই ডিসেম্বর রাতে নরসিংদী সদরের পাঁচদোনায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাঁচদোনা ইউনিয়ন বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি লাল মিয়া মেম্বার ও যুবদল নেতা মোসাদ্দেক গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মোসাদ্দেক ও তার লোকজন লাল মিয়া মেম্বারের লোকজনের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ পাঁচজন আহত হয়। দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন পাঁচদোনা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আলম মিয়া। আহত হওয়ার ৬ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইউনিয়ন শ্রমিক দল নেতা আলম মিয়ার (৫৫) মৃত্যু হয়েছে।

৭ ডিসেম্বর শনিবার নরসিংদীর রায়পুরার মেথিকান্দা এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মানিক মিয়া ও সাবেক নারী ইউপি সদস্য কল্পনা বেগম নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে আরও ১০ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহামেদ রাজুর এক সময়ের সমর্থক যুবলীগ নেতা আবিদ হাসান রুবেলের সাথে অপর সমর্থক বাসেত মেম্বারের দন্ধ চলে আসছিল। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে এই দন্দ্ব আরো তীব্র হয়। এরই জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সব সংঘর্ষে একাধিক ব্যক্তি নিহত ও আহত হয়।
জামাল নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ৫ আগষ্টের পর ভেবেছিলাম আমরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারবো। কিন্তু না নরসিংদীতে আধিপত্য, চাঁদাবাজী ও দখলবাজী নিয়ে যে ধরনের খুন খারাবী শুরু হয়েছে, নিজ প্রতিষ্ঠানেও আমরা নিরাপদ নই। নরসিংদীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারনে, দখল ও চাঁদাবাজীর খেলা আগের মতোই আছে। বদলেছে শুধু কিছু খেলোয়াড় ও জার্সি। আগেই অনেক ভালো ছিলো, তখন ছিলো নির্দিষ্ট খেলোয়াড় আর এখন দিন দিন নতুন খেলোয়াড়দের আবির্ভাব হচ্ছে। এতে করে আমরাও শংকিত, এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় সাধারণ মানুষ রুখে দাঁড়াতে পারে। তখন তো ঘরে ঘরে যুদ্ধ লেগে যাবে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহীনিকে দ্রুত আরো কঠোর ভুমিকা রাখতে হবে।
জেলার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ করতে না পারলে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ ড. মশিউর রহমান মৃধা। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি শুধু নরসিংদী জেলা নয়,সারাদেশেই একই চিত্র। যে পরিবর্তনের আশায় ৫ আগষ্টে বিপ্লব ঘটেছিলো,সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কিন্তু আমরা দেখছিনা। অপরাধ প্রবনতা সারা বিশ্বেই আছে। সেই অপরাধ প্রবনতা রোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনির কঠোর ভুমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে ৫ আগষ্টের পর আমাদের পুলিশ বাহীনির মনোবল অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। পুলিশ বাহীনির মনোবল আরো চাঙ্গা ও কঠোর করার জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত ভুমিকা রাখতে হবে। অপরাধ প্রবনতা রোধ করতে না পারলে , মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিবে। আর তখনই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তাই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ব্যর্থতা নাকি কোন প্রতিবন্ধকতা আছে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরনে সময়ের প্রয়োজন। এখানে পুলিশের ব্যর্থতা নেই আবার কোন প্রতিবন্ধকতা ও নেই। কারন প্রতিটা ঘটনার পর পুলিশ কিন্তু থেমে নেই। মাধবদী থানা ও আদালত প্রাঙ্গণে হামলাকারীদের সনাক্ত করে ইতিমধ্যে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও সকল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সনাক্ত করে কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার কারনে সময় লাগছে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন, গত ৫ আগস্টের পর আমাদের জনবল ও যানবাহনের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট থেকে সামনে এগিয়ে যেতেও সময় লাগবে।
তাছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত রাজনীতিবিদ, সমন্বয়ক, সাংবাদিক ও জনগণের সাথে সভা সমাবেশ করছি। আশা করছি অতি দ্রুত আমরা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরন করত পারবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত